ডেস্ক রিপোর্ট : আদালতের রায়ে মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফন হবেন পটিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সেই যুবকের লাশ। ২৯ জানুয়ারি পটিয়া-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মনসা বাদামতল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া ২৯ বছর বয়সী যুবককে (রতন দাশ) মুসলিম রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বেস্বর সিংহ নিহত যুবককের লাশটি দাফনের নির্দেশ দেন। তার ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা ক্বারি মোহাম্মদ আকরাম হোসাইনের জিন্মায় মুসলিম রীতিনীতি অনুযায়ী লাশটি দাফনের নির্দেশ দেন আদালত।
যুবকটির ধর্মীয় শিক্ষক ক্বারী আকরাম হোসাইন জানান, আমার ছাত্র আহমাদের লাশটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে আদালতের রায় অনুযায়ী আমি বুঝে নিয়ে রাত ১০ টায় জানাজা শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। চট্টগ্রামের চৈতান্য গলি (২২ মহল্লা) কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত যুবকের মা সন্ধ্যারানী দাশ জানান, এ রায়ে আমি অসন্তুষ্ট। রায়ের বিপক্ষে আমি উচ্চ আদালতে যাব।
হিন্দু নাকি মুসলিম এই পরিচয়ের বেড়াজালে আটকে থাকা লাশটির ধর্ম পরিচয় নিশ্চিত করে ২০ এপ্রিলের মধ্যে পুলিশি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছুটি থাকার কারণে সেদিন আদালত বন্ধ থাকায় সোমবার (২৪ এপ্রিল) শুনানির দিন ধার্য করেন। ঐদিন উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে পটিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিশ্বেস্বর সিংহ এই আদেশ দেন।
গত ২৯ জানুয়ারি পটিয়া উপজেলার মনসা বাদামতল এলাকায় তেলবাহী লরির চাপায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
এদিকে, নিহত যুবকের মা সন্ধ্যারানী দাশ শুরু থেকেই দাবি করে আসছিলেন রতন দাশ হিন্দু ছিলেন। তাই হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে শেষকৃত্য চিতায় সম্পন্ন করতে চান। কিন্তু তার সহপাঠীদের দাবি, তিনি ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের লালখান বাজার এলাকার একটি মাদরাসায় মাওলানা হারুন এজাহারের কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন ও ইসলাম ধর্মের সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতেন। তাই তারা মুসলিম হিসেবে তার লাশ দাফন করতে আগ্রহী। এজন্য তারা সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে হাইওয়ে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাফেজ ক্বারী আকরাম হোসাইন।
মুসলিমের পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট কপিল উদ্দিন চৌধুরী জানান,মুসলিম রীতিমত নিহত যুবকের লাশ দাফন কাফনের জন্য আদালত রায় দিয়েছেন। তবে আমি এ বিষয়টি নিয়ে কাউকে উল্লাস না করার জন্য অনুরোধ করছি।হিন্দু পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট সুমন কুমার শীল জানান,এই রায়ের বিপক্ষে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
জানা যায়, নিহত যুবক তার মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় মুসলিম হওয়ার পরও তার মাকে নিয়ে নগরীর একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। আগ্রাবাদ এলাকায় একটি মোবাইল এক্সোসরিস প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করতেন। আর তার মৃত্যুর পরেই ধর্ম পরিচয় নিয়ে বাধে বিপত্তি। তার মৃত্যুর প্রায় সাড়ে তিন মাস আদালতের রায়ের অপেক্ষায় ছিল নিহত যুবকের পরিবার ও সহপাঠীরা।
এদিকে হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, নিহত ওই যুবকের নাম ছিল রতন দাশ (২৯)। বাড়ি মিরসরাই উপজেলার পূর্ব মায়ানী গ্রামে। তার বাবার নাম মনোরঞ্জন দাশ ও মায়ের নাম সন্ধ্যা রানী দাশ। নিহত যুবক দুই বছর আগে মুসলিম হিসেবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে নাম পরিবর্তন করে আহমাদ নাম হয়েছেন। যার নোটারী নম্বর-১১০৫৪৪ । ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার বেশ কিছু ছবিও রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও তার সহপাঠীদের মধ্যে বিপত্তি ঘটলে উভয়পক্ষ আর হাইওয়ে পুলিশ আদালতের দ্বারস্থ হন।
নিহত যুবকের সহপাঠী সিরাজুল মাওলা মিলাদ জানান, সে মনে প্রাণে ইসলাম ধর্ম মেনে মুসলিম হয়েছে। আমরা সহপাঠীরা তার মৃত্যুর পর সে যে মুসলিম হয়েছে তার সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
হাইওয়ে থানার ওসি স্নেহাংশু বিকাশ সরকার জানান , চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্ত শেষে আমরা গত ২৮ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা নিহতের ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করতে তার গ্রামের বাড়ি ও শহরে যে এলাকায় অবস্থান করতেন সেখানে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক রুহুল আমিন জানান, আমি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করার পর বুঝতে পেরেছি হিন্দু ও মুসলিম দুই পক্ষই লাশটি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। গত ২৮ মার্চ আমি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি।