ডেস্ক রিপোর্ট : দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ার মাদক সম্রাট নামে খ্যাত একরাম হোসেন (৪০) কে আটক করেছে পটিয়া থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা পরোয়ানা ছিল।
শুক্রবার ভোর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও কলঘর এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানান,উপ পরিদর্শক মনোয়ার হোসাইন।
মাদক সম্রাট একরাম হোসেন হাইদগাঁও ইউনিয়নের মুনাফ তালুকদারের পুরান বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে।
স্হানীয় সূত্রে জানা যায়, হাইদগাও মাহদাবাদ এলাকার একরামের নেতৃত্বে উপজেলার সতেরটি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় মাদকের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। যার ফলে এলাকার উঠতি বয়সের ছাত্র ও তরুণ যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এসব মাদক ও ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান হোতা একরাম একজন চিহ্নিত মাধক কারবারি। কেলিশহর ও হাইদগাও ইউনিয়নে রয়েছে তার ৫০ সদস্যের একটি মাদক সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পটিয়ার কেলিশহর পূর্ব অঞ্চল পাহাড়ের এ সিন্ডিকেট গঠন গড়ে তুলে মাদকের রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছে । এমন কি তাদের এ কাজে ব্যবহার করছে ছোট শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীদেরও। তাদের সাথে যুক্ত রয়েছে রোহিঙ্গারাও। মাদক কারবারিদের ট্রানজিট নিরাপদ পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করছে পূর্ব অঞ্চল পাহাড় এলাকায় সাতগাঁছিয়া দরবার সম্মুখ সড়ক, মাহতাবাদ গ্রামীণ সড়ক। একরাম জনসম্মুখে কোমড়ে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন বলে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে মানুষের বাড়িঘর দখল ও আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষের বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের লোকদের ম্যানেজ করে মাদক কারবার চালাচ্ছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, প্রায় এক যুগ যাবত স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে পটিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল, ছোলাইমদের পাইকারি ডিলার হিসেবে নিজস্ব মাদক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন একরাম। হাইদগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের শেল্টারে দিব্যি তার অপকর্ম চালিয়ে যান। হাইদগাঁও ইউনিয়ন সাতগাছিয়া দরবার সংলগ্ন পাহাড় ও মাহাদাবাদ, তুলাতুলি, সেন পাড়া আশ্রম এলাকায় মাদকের আস্তানা গেড়েছেন একরাম। একরামের নেতৃত্বে বান্দরবানের রাজারহাট, রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ের দেশীয় তৈরি বাংলা মদ পাহাড়ের সুড়ঙ্গ পথে পটিয়া সাতগাছিয়া প্রজেক্ট এলাকায় এনে সারা পটিয়া পাচার করছেন। একই এলাকার মাদক সম্রাট মাহাদাবাদ এলাকার একরাম হোসেনের সাথে আছেন মোঃ আলম, হাইদগাও ২নং ওয়ার্ডের মোঃ পেয়ারু, মোঃ সেলিম, কচুয়াই উত্তর শ্রীমাই মাহবুব, হাইদগাও ২নং ওয়ার্ডের তুলাতল এলাকার মোঃ কাসেম, কেলিশহর কুয়ার পাড়া এলাকার মোঃ ইউনুসের ছেলে সাইফুর রহমান, মরাখাল এলাকার কালু, কাজী পাড়ার নাজিম, আকবর শাহ মাজার এলাকার কুতুবউদ্দিন, মহিউদ্দিন, বৈদ্য পাড়া এলাকার সেলিম সহ পৃথক পৃথক সিন্ডিকেট গঠন করে একেক এলাকায় জোন হিসেবে ভাগ করে জমজমাট মাদক ও ইয়াবা ব্যাবসা চালিয়ে আসলেও সাধারণ জনগণ তাদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। মাদক সম্রাটরা ব্যাবসা করে এখন তারা লাখপতি হয়েছেন বলে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে। মাদক ব্যাবসায়িরা রাঙ্গুনিয়া কমলাছড়ি বান্দরবানের রাজার হাট থেকে মাদক ক্রয় করে পাহাড়ের সুড়ঙ্গ পথে পটিয়ায় এনে চট্টগ্রাম শহর সহ বিভিন্ন উপজেলায় বিকিকিনি করে থাকে। পটিয়া থানার পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ব্যাবসা বীরদর্পে করে যাচ্ছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। বিভিন্ন সময়ে পটিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তার করলেও কোন অবস্থাতেই মাদক ব্যাবসা নির্মুল করা যাচ্ছে না। ফলে এলাকার তরুণ উঠতি বয়সের তরুণ যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ মাদক সম্রাটের বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েক বার অভিযান হলেও গ্রেফতার হননি। স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাদের ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেলেও এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি তার।
পটিয়া থানার এসআই মানোয়ার হোসাইন এর নেতৃত্ব সঙ্গীয় এসআই মোফাজ্জল, এসআই উনুমং মারমা, এসআই শহীদ বিশ্বাস , এএসআই আনোয়ার সহ রূদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, মাদক সম্রাট একরামকে ধরতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার সহযোগিরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। এবার তার বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা পরোয়ানা থাকায় বিশেষ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অস্ত্র ও মাদকের মামলা রয়েছে। শনিবার দুপুর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।