ডেস্ক রিপোর্ট : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে এক যুবকের মরদেহ পড়ে আছে। সেই মরদেহের শেষ ফয়সালা কোন্ ধর্মের নিয়ম অনুসারে হবে তার সিদ্ধান্ত নিতে যেতে হলো আদালতে। নিহত যুবকের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে তৈরি হওয়া ধূম্রজাল। নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেটি হিমাগারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পটিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বেশ্বর সিংহ তাঁর আদালতে সোমবার বিকেল ৩টার দিকে এ রায় দেন। জানা যায়, রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার বাদামতলে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন এক যুবক। তার মরদেহ চমেক হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। যুবকটির মা-বাবা জাতিগতভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বী হলেও তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি হলফনামা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধূম্রজাল। নোটারি পাবলিক করা ওই হলফনামাটি সত্যি নাকি ফেইক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হলফনামা অনুসারে, যুবকটি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এখন এই যুবকের মৃত্যুর পর পরিবার এবং যুবকের কিছু বন্ধু মরদেহের দাবিদার হিসেবে থানায় হাজির হয়েছেন। এ অবস্থায় চপুলিশ সোমবার আদালতের দ্বারস্থ হয়। এর আগে রবিবার রাত বারোটার দিকে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে চমেক হাসপাতালের মর্গে মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। সেই মামলার জেরেই আদালত এই রায় দেন। কথিত হলফনামা অনুসারে, নিহত ওই যুবকের নাম রতন দাশ (২৯)। তিনি মিরসরাই উপজেলার মৃত মনোরঞ্জন দাশ ও সন্ধ্যা রানী দাশের একমাত্র ছেলে। ধর্মান্তরিত হয়ে যুবকটি নিজের নামকরণ করেন ‘আহমাদ’। রতনের মা সন্ধ্যা রানী দাশ বলেন, ‘আমার ছেলে মুসলমান হয়নি।’ ছড়িয়ে পড়া নথিটি একটা ‘ভুয়া নোটারি’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে আমার সঙ্গে থাকত। সনাতন ধর্মের সব কিছু পালন করত। শনিবার রাতে আমি চাকরি থেকে দেরিতে বাসায় ফেরাতে সে বাসায় পূজা দিয়েছে।’ ছেলের মুখে থাকা দাড়ি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আজকাল তো সবাই দাড়ি রাখে, সেও রেখেছে।’ কথিত হলফনামা অনুযায়ী, রতন দাশ ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নোটারি পাবলিক করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তার োবর্তমান নাম আহমাদ (২৯)।
পটিয়া হাইওয়ে পুলিশের ওসি স্নেহাংশু বিকাশ সরকার বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় লরির চাপায় নিহত রতন দাশের মাথাটি বিকৃত হয়ে গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন এসে তাকে শনাক্ত করেছেন। এরপর আমরা জানতে পারলাম তিনি দুই বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এটি জানার পর আমরা তার হিন্দু মা ও খালুর কাছে মরদেহ হস্তান্তর করিনি। তাদেরকে আদালতে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর মরদেহ হস্তান্তরে বিষয়টি জানানো হয়। মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য চমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’ সোমবার বিকেলে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বেস্বর সিংহ লাশটির ধর্ম পরিচয় সনাক্ত হয়ে বিরোধ যতদিন নিষ্পত্তি না হবে ততদিন লাশটি চমেক হাসপাতালে হিমঘরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া দুর্ঘটনা কবলিত মোটর সাইকেল ও তেলবাহী গাড়ি উদ্ধার করে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আটক রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। আইনজীবী এড. লীলা দে বলেন, রতন দাশ নামের এক যুবক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর মুসলিম হওয়া নিয়ে যে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে আদালত এ বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লাশটি চমেক হাসপাতালের হিমঘরে রাখার জন্য নির্দেশ দেন।