1. [email protected] : [email protected] :
  2. [email protected] : patiyaprate :
June 28, 2025, 8:59 pm

দলে অবহেলিত লায়ন এম সামশুল হকের নিরব প্রস্হান

প্রতিনিধির নাম
  • প্রকাশ সময় : Wednesday, January 25, 2023
  • 192 Time View

আ ন ম সেলিম, পটিয়া : নিজ দল আওয়ামী লীগে অবহেলিত আর বঞ্চিত ছিল অভিমানী লায়ন এম সামশুল হক। বুকে এক সাগর কষ্ট নিয়ে পৃথিবী থেকে করেছেন নিরবে প্রস্হান। গত ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শহরের একটি হাসপাতালে ৭৬ বছর বয়সে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অবসান হয় এক বর্ণাঢ্য কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবনের।

অনেকটা নীরবে কবরে শুইয়ে আছে তার নিথর দেহ। অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ করেছেন।
সামশুল হকের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া হলেও রাজনীতিতে হাতেখড়ি শহরের ফিরিঙ্গি বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু নিজেই জানে আলম দোভাষের বাড়িতে বসে সামশুল হককে এ পদ দিয়েছিলেন ১৯৬৯ সালে। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণে রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে পটিয়ার নিজ এলাকা জিরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি,পরবর্তীতে পটিয়া থানা আওয়ামী লীগের দুবার সহ সভাপতি থাকার পর ১৯৮৩ সালে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ১৯৮৫ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৯৬ সালে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ছিলেন।
২০০৮ সালের ৯ম সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাজনীতি-সচেতনরা মনে করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য লায়ন এম সামশুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। সেবার এমপি মনোনয়নের জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগের ভোটে তিনি প্রথম হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখাতে পারেননি সামশুল হক। অথচ যুদ্ধ না করেও অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভূক্ত হয়েছেন।নিচ্ছেন সরকারি ভাতাও। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) হাউজ টিউটর ছিলেন চট্টগ্রামের সন্তান ড. মাহফুজুল হক। সে সুবাদে ইকবাল হলে থেকে ওয়েস্টেন্ড হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন তাঁর ছোট ভাই এম সামশুল হক।
মুসলিম হাই স্কুলে পড়ার সময় ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন বাতিল আন্দোলন করতে গিয়ে জেলে গিয়েছিলেন সামশুল হক। সিপাহী বিদ্রোহের শত বার্ষিকী উপলক্ষে সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কার্জন হলে’-এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চলে যাওয়ার সময় মঞ্চের পাশে থাকা সামশুল হক কে হাত দিয়ে আদর করেন বঙ্গবন্ধু। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রামে জনসভা করতে এসে বঙ্গবন্ধু ঐ দিন রাতে চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা জানে আলম দোভাষের (বর্তমান সিডিএ’ র চেয়ারম্যানের বাড়ি) দোভাষ হাউজে অবস্থান নেন। জানে আলম দোভাষের ছোট ভাই বদিউল আলম দোভাষ ও লায়ন এম সামশুল হক পরস্পর বন্ধু হওয়ায়
বদিউল আলম দোভাষের সাথে বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে ঢুকে পড়েন সামশুল হক।
সে সময় সেখানে উপস্হিত ছিলেন এমএ আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, এমএ হান্নান, ডা. এমএ মান্নান, আতাউর রহমান খান কায়সারসহ চট্টগ্রামের সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এসময় উপস্থিত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সামশুল হক কে ড. মাহফুজের ভাই হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।যুক্তফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ১৯৬৪ সালে এক মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ড. মাহফুজ কে বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই চিন্তেন।বঙ্গবন্ধুর ঐদিনের নির্দেশনা অনুযায়ী সামশুল হক কে ফিরিঙ্গি বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের সময় হুলিয়া মাথায় নিয়ে চটগ্রাম শহরে রাজনীতি করেছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি পটিয়ার নিজ গ্রামে গিয়ে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন।
১৯৭৭ থেকে ১৯৯৮ সালে এম. সামশুল হক আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবের চট্টগ্রাম জেলার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তিনি ১৯৬৬ সালে লালদিঘীর মাঠে ৬ দফার সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত ছিলেন।
১৯৬৩ সালে তৎকালীন কমার্স কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে কারা নির্যাতিত ছাত্রনেতা হিসেবে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মৌলভী সৈয়দ আহমদ উলা পাশ করে মুসলিম হাই স্কুলে সামশুল হকের সঙ্গে ৮ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। তারা একই সঙ্গে মেট্রিক পাশ করেন। মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে সামশুল হক তার আরেক বন্ধু প্রয়াত মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বেপারী পাড়ার কমিশনার জালাল উদ্দিন, হারেস, ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল ইসলাম (সিডিএর ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন), হারুন খানসহ আরও অনেকে একসাথে মুক্তিযুদ্ধে কাজ করেন।
তৎকালীন পটিয়ার এমএলএ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সহ কৈয়গ্রাম মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জনসভা করে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাহারা অস্ত্র জমা দিয়েছিল।

নিউজটি শেয়ার করে অন্যকে পড়তে সহযোগীতা করুন

আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2019
Theme Customized By LiveTV