ডেস্ক রিপোর্ট : চট্টগ্রামের পটিয়ার শ্রীমাই খালেই হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম, এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা।গত ১৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকের চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় আরো প্রায় ১০ হাজার ৬৪০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) চট্টগ্রাম ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা জানান, আপাতত পটিয়াতেই ড্যাম নির্মাণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ডিপিপি যা এখন প্ল্যানিং কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে ।তিনি জানান, পটিয়ায় শ্রীমাই খালের ওপরে এই ড্যাম নির্মাণ হলে খালের ভাঙন প্রতিরোধসহ এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। ৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ড্যাম ও এর সাথে খালের ভাঙন প্রতিরোধে নির্মিত হচ্ছে ৬.১০ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ। এ জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, বাপাউবো চট্টগ্রাম অঞ্চলের পটিয়ার শ্রীমাই খাল, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালার মাইনী নদী ও রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্যালি কাসালং নদীতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক তিনটি অত্যাধুনিক হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। তিনটি পৃথক নদী ও খালে ড্যাম নির্মাণ, তীর সংরক্ষণ, সাজেক ভ্যালিতে ওভারহেড ট্যাংক (জলাধার) নির্মাণ, নদী সেচ ও আনুষঙ্গিক সুবিধা প্রবর্তনসহ প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রাম জেলাসহ তিন উপজেলায় চাষের আওতায় (সেচের আওতায়) আসবে পাঁচ হাজার হেক্টর ফসলি জমি (প্রায় ১২ হাজার একর), তিন উপজেলায় ভাঙন প্রতিরোধ, পার্কিং ইয়ার্ড ও আট হাজার ৪০০ বর্গমিটার এলাকার ভরাট করা ও সাজেক ভ্যালিতে সুপেয় পানি সরবরাহের স্থায়ী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল যৌথ ডিপিপি।বাপাউবো সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বেশ কয়েক বছর পূর্বে চীনের একটি প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন এবং ওই দেশে তাদের উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। পানি সংরক্ষণ নদীপথের ল্যান্ডস্কেইপিং সেচের পানি সংরক্ষণ, নদীর ধারণ ক্ষমতা বর্ধন করা সম্ভব হবে নুতন উদ্ভাবিত ওই প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। এই প্রযুক্তিটি অনেকটা রাবার ড্যামের মতো হলেও এই প্রযুক্তিতে আধুনিক নির্মাণ শৈলী ব্যবহারিত হওয়ায় এর সুবিধা রাবার ড্যামের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। এ কারণে উপযুক্ত এবং উন্নত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশে পানি ব্যবস্থাপনা অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বেইজিং ওডঐজ করপোরেশনের প্রতিনিধিত্বে চায়না ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার রিসোর্সের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই সমঝোতা স্মারকের আলোকে গঠিত কারিগরি কমিটির সদস্যগণ ২০১৩ সালের মে মাসে বেশ কয়েক দিন চীন ভ্রমণ এবং চীনে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত বেশ কয়েকটি হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম পরিদর্শন করেন। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বাপাউবো কর্তৃপক্ষ দেশে হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। অপর দিকে চীনা দলটিও গত ২০১৫ সালের জুন মাসে বাংলাদেশে আসেন এবং দেশে হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম নির্মাণের সম্ভাব্য এলাকা পরিদর্শন এবং পরিদর্শন করা স্থান গুলোতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত ড্যাম নির্মাণের সুপারিশ করেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৯ সালে ওডগ এর মাধ্যমে তিনটি স্থানে ড্যাম নির্মাণের প্রয়োজনীয় সমীক্ষা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ওই সমীক্ষার ভিত্তিতেই চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে তিনটি পৃথক অত্যাধুনিক হাইড্রোলিক এলিভেটেড ড্যাম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বাপাউবোর কর্মরত প্রকৌশলীরা।বাপাউবো কর্তৃপক্ষ জানান, প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি ছিল পটিয়া শ্রীমাই খালে ৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প।এতে ৬.১০ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কাজ করার মধ্য দিয়ে উপজেলায় পাঁচ হাজার একর অনাবাদি জমি সেচের আওতায় আসবে।তাছাড়া বাঁধের নিম্নাঞ্চল চাঁন খালের মুখ পর্যন্ত শ্রীমাই খালের বেড়ি বাঁধের দু’পাশে ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া শ্রীমাই খালে হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম বসিয়ে পাহাড়ি ঢলসহ বর্ষার জলরাশি সংরক্ষণ করে সেচের কাজে লাগানো হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা ও ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাপাউবো আপাতত পটিয়ার শ্রীমাইখালের ওপর নেয়া প্রকল্পটি প্রথমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন সে মোতাবেক প্রকল্প প্রোফাইল তৈরি করা হয় যা এখন প্ল্যানিং কমিশনে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাপাউবো চট্টগ্রাম ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা।